তেলেভাজা
প্রতি রোববার করে আমাদের আড্ডা জমে৷ গল্প-কবিতা-উপন্যাস-নানা বিষয় নিয়ে কথা বার্তা হয়৷ এরই ফাঁকে একটু দেরী করে হলেও বর্ষা নেমেছে৷ জানালার বাইরে কাচের সারসিতে জলের আলপনা৷ আহা বরিষণ মুখরিত এমন দিনে, আড্ডা জমে কি তেলেভাজা বিনে! নাহ, স্রেফ জমে না৷ অন্য কোনও কিছু নয়, এবারের আমাদের সংখ্যা তাই অবধারিত ও নির্বিকল্পভাবেই আদি-অকৃত্তিম তেলেভাজা৷
আসলে কী মনে হয় জানেন, এই তেলেভাজাহল আমাদের আরশি৷ সে বাঙালিকে দেখিয়ে বলে, বাপু হে, তুমি হিপোক্রিট৷ এই কোলেস্টেরল নিয়ে মেলা ফ্যাচর ফ্যাচর করবে, এমনকী তোমাদের ছবিরও নাম হবে ‘রোগা হওয়ার সহজ উপায়’, আর ঠাণ্ডা ছবিঘরের বাইরে বেরিয়ে, দিব্যি দু’পিস তেল চুপচুপে তেলেভাজায় কামড় বসাবে! বাঙালির দ্বৈততা নিয়ে বড় বড় গবেষণাপত্র লেখা যেতে পারে, বাঙালি বিদ্বজনদের তা রচনাতেও কসুর করেন না, কিন্তু মাত্র একটা তেলেভাজাই এতিবড় বাঙালি চরিত্র দর্শনের আয়না হয়ে দাঁড়ায়৷
তবে আমরা মশায়, অত গুরুগম্ভীর চাইছি না৷এমনকী তেলেভাজা শিল্প নাকি শিল্প না সে কূট তর্কও তুলে রাখছি৷ আমাদের ডুব তেল চুপচুপে নস্ট্যালজিয়ায়৷ শহরের তেলেভাজার ঠেকগুলিতে৷ মোদ্দা কথা, ধরুন ঝিরিঝিরি বৃষ্টি পড়ছে৷ হাতে লম্বা একটা ছুটির দিন৷ অতএব নিখাদ আড্ডা৷ এবং তাতে তেলেভাজা থাকবে না তাই আবার হয় নাকি!
আজকাল আবার প্যাকেটের ভাজাভুজির চল হয়েছে৷ কিচেনে গড়িয়ে যায় চিকেনের বল৷ কোনও কোনও খাবারে সীসা নিয়ে বেদম হইচই৷ তবু পাড়ার মোড়ে তেলেভাজা দেখে সব স্বাস্থ্যসচেতনতা শিকেয় তোলেনি এমন বাঙালি বিরল৷ ওই বাচ্চারা যেমন জেনেশুনেও দুষ্টুমি করে৷ তারপর ধরা পড়ে মিটিমিটি হাসে৷ বড়বেলার সেই অনুভূতি বোধহয় তেলেভাজা খাওয়ায়৷ আজ সেই নির্ভেজাল অনুভূতি আস্বাদনের দিন৷
সকলকে তেল চুপচুপে ছুটির দিনের শুভেচ্ছা৷
আসুন তেলেভাজার বারকোষের ঢাকনা খোলা যাক..
No comments:
Post a Comment